সিলেটে নতুন পর্যটন স্পট বুজির বন

Comments · 5393 Views

সিলেটে আরও একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে।

সিলেটে আরও একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে। বনের নাম! প্রকৃতির মাঝে লুকিয়ে থাকা এক সুন্দর বন। সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তে একটি নির্জন স্থানে এর অবস্থান। এই বন প্রকৃতির একটি আদর্শ বাগানের মতো। বুজি বন বৈশিষ্ট্যগতভাবে একটি 'সোয়াম্প ফরেস্ট'। তিন নদীর সঙ্গমস্থলে প্রদীপের নিচে অন্ধকার বন আজও টিকে আছে অনাদিকাল থেকে। এ নদীর বুক চিরে চলে গেছে করিচ ও কাপনা নদী। এর সাথে পুরাখাই নদীর একটি শাখা যুক্ত হয়েছে।

সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে হরিপুরের পর কড়িচ সেতু। ওই সেতু থেকে মাত্র চার কিলোমিটার পশ্চিমে বনটি অবস্থিত। এটি ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা এবং দুর্গমতার কারণে বলে মনে হচ্ছে। বনের বুক চিরে যাওয়া নদীতে গেলে দেখা যায় হিজল-করচ-জারুল-বরুন-শেওড়া-বুড়ি আর কদমের লম্বা সারি। গাছ একে অপরকে ঘিরে আছে। শতবর্ষী হিজল গাছ ডাল-পালা নিয়ে অনেক জায়গায় ছড়িয়ে আছে। প্রবল বর্ষণে সে জেগে ওঠে নতুন রুপে।

বনের বিচিত্র সব গাছপালা, জলজ-স্থলজ-উভচর প্রাণী এবং মাছ শিকারীদের নিয়ে নিজস্ব নির্জন জগৎ। শতাব্দী ধরে এটি কীভাবে পর্যটকদের কাছ থেকে লুকিয়ে রয়েছে তা একটি রহস্য।

বুজি বন বৈশিষ্ট্যগতভাবে একটি 'সোয়াম্প ফরেস্ট'। বনের 'ইকোসিস্টেম' পানির ওপর নির্ভরশীল। এটি সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী অনেক হাওরের মধ্যে একটি নির্জন স্থানে অবস্থিত।

বনে প্রবেশ করলেই দেখা যায় মুর্তা, বেট, হোগলা ও শান-এর ঘন জঙ্গল। বড় গাছের নিচে এই ঝোপগুলো দেখলে আপনার মনে হবে ওরা মায়ের মতো ভালোবাসার চাদরে ঢেকে দিয়েছে ছোট গাছগুলোকে। সন্ধ্যার আলো-আঁধারে প্রতিটি হিজল গাছকে মনে হয় গভীর ধ্যানে দরবেশ। বনের উত্তর-পশ্চিম পাশে রয়েছে ১ নম্বর বিশাল হাওর। দিগন্তের ওপারে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় মনকে আকুল করে তুলতে পারে না।


বুজি বন জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি বন। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, জলজ এবং স্থলজ প্রাণীদের জন্য একটি সমৃদ্ধ আবাসস্থল। বনে ছাগল, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দেখা যায়। স্থানীয় জেলেরা জানান, অনেক বাঘও বনে থাকে। চিল, ঈগল, ডাহুক, কানাবোক, বালিহাসহ নানা প্রজাতির পাখি এই বনে আশ্রয় নেয়। বিশেষ করে শীতকালে পরিযায়ী পাখিতে ভরপুর থাকে বন। দেশীয় প্রজাতির মাছে ভরপুর বন। স্থানীয় জেলেরা এই বনে মাছ শিকার করে বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে।

এত আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও বন বিভাগের নথিপত্রে বনটির অস্তিত্ব নেই। তবে ২০ একরের উপরে জলমহালের একটি তালিকায় বুজির বিল নামে একটি জায়গার কথা বলা হয়েছে যা জৈন্তাপুরের ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। জঙ্গলটি প্রাচীনকালে প্রকৃতির দ্বারা গঠিত হয়েছিল বলেই রয়ে গেছে। তার অফুরন্ত সম্পদ দিয়ে, এটি পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রেখে শতাব্দী ধরে মানুষের চাহিদা পূরণ করেছে। হেমু গ্রামের মানুষের কাছে বনটি সুপরিচিত কিন্তু বহিরাগতদের কাছে অপরিচিত।

Comments